বেগম খালেদা জিয়া
গণতন্ত্রের আপোষহীন মাতা, প্রকৃত বীরোচিত রাষ্ট্রনায়ক ও সর্বজনীন নেতা।
প্রারম্ভিক জীবন | Roots of a Leader |
বেগম খালেদা জিয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৫ আগস্ট ১৯৪৬, দিনাজপুর জেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে।
তাঁর পিতা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মাতা তাইয়েবা মজুমদার। পিতা ১৯৪৭ সালের বিভাজনের পর জলপাইগুড়ি, ভারতের ব্যবসা ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হন। পরিবারের মূল নিবাস ফেনি জেলা, দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে।
শৈশব থেকেই দৃঢ় নীতি, দায়িত্ববোধ এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তার চরিত্রে প্রকাশ পেতে শুরু করে। পরিবারের স্নেহ, সামাজিক মূল্যবোধ, এবং ন্যায়ের প্রতি সংবেদনশীলতা তাকে গড়ে তোলে একজন সচেতন, নৈতিকভাবে দৃঢ় নারী হিসেবে।
তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-এ এবং পরবর্তীতে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ-এ অধ্যয়ন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি বিয়ে করেন জিয়াউর রহমান-কে।
যখন জিয়াউর রহমান বীর উত্তম হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন, বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির স্ত্রীরূপে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যার মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এবং নেদারল্যান্ডসের রানী জুলিয়ানা।
১৯৮১ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়ার নিহত হওয়ার পর, ২ জানুয়ারি ১৯৮২-এ বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিতে সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগ দেন।
তার প্রাথমিক শিক্ষা এবং পারিবারিক শিক্ষাব্যবস্থা তাকে জীবনের প্রথম নেতৃত্বের পাঠ দেয়—যা পরবর্তী রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগ্রামে অবিচল শক্তির ভিত্তি হয়ে ওঠে। এখান থেকে শুরু করে তার পথচলা ধীরে ধীরে পাকিস্তানি শাসন, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক স্বীকৃতি এবং সর্বশেষ গণতন্ত্রের আপোষহীন মাতার মর্যাদায় পৌঁছায়।
অধ্যায় ১ — ১৯৭১:
স্বাধীনতার ঘোষণা ও যুদ্ধবন্দী হওয়া। Declaration of Independence & Becoming a Prisoner of war |
১৯৭১। ভুবন ভেঙে যাওয়া এক সময়।
একদিকে দমবন্ধ করা নিপীড়ন, আরেকদিকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা।
এই উত্তাল সময়েই চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে
মেজর জিয়াউর রহমান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন কমিশন্ড অফিসার,তার সৈনিকের বীরোচিত বিদ্রোহ ঘোষণা করেন—
“আমি মেজর জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।”
এ ঘোষণার খবর ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই আর ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা শিরোনাম করে—
“জিয়াউর রহমানের ঘোষণা—স্বাধীনতার তূর্যধ্বনি”
এই ঘোষণা পাকিস্তানি শাসকদের চোখে ছিল
“রাষ্ট্রদ্রোহ”— সোজা কথায়, মৃত্যু-যোগ্য অপরাধ।শাসকগোষ্ঠী প্রতিশোধে অন্ধ হয়ে খুঁজে বের করে তার পরিবারকে— তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দুই শিশু সন্তানসহ গ্রেফতার করা হয় এবং তারা পরিণত হন যুদ্ধবন্দী পরিবারের সদস্যে।
তিনি তখন কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের নারী ছিলেন না; ছিলেন একজন সৈনিকের স্ত্রী, যার স্বামী স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে বিদ্রোহ করেছিলেন— আর যার পরিবারকে সেই অপরাধের দায়ে বন্দী করা হয়েছিল।
এ বন্দীদশাই ছিল বেগম খালেদা জিয়ার জীবনে প্রথম রাষ্ট্রীয় আঘাত, প্রথম অন্যায়ের স্বাদ, প্রথম সংগ্রামের শপথ।
এটাই পরে তাকে গড়ে তোলে অবিশ্বাস্য মানসিক শক্তির রাষ্ট্রনায়কে।
অধ্যায় ২ | গৃহিণী থেকে আপোষহীন গণ মানুষের পক্ষে বিরোধী নেত্রী (১৯৮২–১৯৯০)। From Homemaker to Relentless Opposition Leader (1982–1990)।
(The Rise of an Uncompromising Stateswoman)
১৯৮১ সালরে ৩০ মে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এক দল বিপথগামী সেনা সদস্যদের বুলেটের আঘাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নিহত হোন। ১৯৮২—বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল অস্থির, অনিশ্চিত, আর রাস্তায়-রাস্তায় ভয়ের সীমানা। এই সময়ে ছিলেন এক সাধারণ গৃহিনী, দুই সন্তানের মা, হঠাৎ রাজনীতির ময়দানে পা রাখলেন—
নাম তাঁর — ” খালেদা জিয়া “
এন্ট্রি ছিল শান্ত—কিন্তু ইমপ্যাক্ট ছিল ভূমিকম্পের মতো।
তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন, কিন্তু খুব দ্রুতই প্রমাণ করলেন—এই নারী নন-স্টপ। ঐতিহ্যের পথ ধরে, দায়িত্বশীলতা আর দৃঢ়তা মিলিয়ে তিনি দলকে বুঝিয়ে দিলেন—তিনি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যই তৈরি।
১৯৮৩ | সহ-সভাপতি—এক বছরের মধ্যেই নেতৃত্বে আরোহন এমন দ্রুত উত্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রায় নজিরবিহীন।
১৯৮৩ সালে মাত্র এক বছরের মাথায় তিনি হন দলের সহ-সভাপতি। তার রাজনৈতিক ইনস্টিংক্ট, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধরণ এবং মানুষের প্রতি তার দায়বদ্ধতা তাকে মূলধারার নেতৃত্বে ঠেলে দিলো।
১৯৮৪ | প্রথম নির্বাচিত চেয়ারপারসন—নারী নেতৃত্বে নতুন অধ্যায়
১৯৮৪ সালে তিনি নির্বাচিত হলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন— এটা শুধু দলের ইতিহাস নয়, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসেও ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট।
একজন নারী—
স্বাধীনতার শহীদ রাষ্ট্রপতির স্ত্রী— এবার নিজেই হয়ে উঠলেন জাতীয় রাজনীতির ফ্রন্টলাইন ফাইটার।
ডিক্টেটর বিরোধী মোর্চা গঠন—৭ দলের ঐক্য
১৯৮০–র দশকের বাংলাদেশ ছিল জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের কবলে।
কেউ কথা বলতো না, কেউ দাঁড়াতে চায়নি— কিন্তু তিনি দাঁড়ালেন। তার নেতৃত্বে ৭টি দল একত্রিত হয়ে গঠন করলো এরশাদবিরোধী মোর্চা। ১৯৮৩ থেকে শুরু হলো পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক আন্দোলন— যা পরে বাংলাদেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়।
১৯৮৬ | এরশাদের পাতানো নির্বাচনে অপার আপোষহীনতা
১৯৮৬ সালের নির্বাচন ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে widely criticized—একটি “বাছাই করা ক্ষমতার খেলা”।
অনেকেই পথ হারালেন—
আওয়ামী লীগ, জামায়াত, কমিউনিস্ট পার্টি অংশগ্রহণ করলো। অধিকাংশ মানুষ এটাকে দেখেছিল বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে।
কিন্তু তিনি?
তিনি এক ইঞ্চিও নড়লেন না।
সেই কঠিন সিদ্ধান্ত—
নির্বাচনে না যাওয়া— সংগ্রাম একমাত্র যেনো জনগণের মুক্তির পথ।
তার এই অনড় অবস্থান তাকে দিলো ভিত্তি —
“আপোষহীন নেত্রী”
—- হিসেবে স্থাপন করলো।
এই শব্দটাই পরবর্তীতে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের DNA।
ছাত্রদলকে পুনর্গঠন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়।
তিনি ছাত্রদলকে organizational makeover দিলেন —
leadership pipeline, campus strategy, mobilization সবকিছুতে নতুন ছোঁয়া।
ফলাফল—
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের নিরঙ্কুশ বিজয়, যা ছিল তার সংগঠন দক্ষতার শক্তিশালী সিগন্যাল।
১৯৮৮ | ভয়াবহ বন্যায় মানবিক নেতৃত্বের অনন্য পরিচয়
১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল ধ্বংসাত্মক।
হাজারো মানুষ গৃহহীন, খাদ্যহীন—দেশ ক্লান্ত। সেই সময় তিনি ছিলেন রাস্তায়—হাঁটু–সমান পানিতে দাঁড়িয়ে ত্রাণ বিতরণ করছেন, অসুস্থদের সেবা দিচ্ছেন, গ্রামের পর গ্রাম ঘুরছেন।
জনগণ প্রথমবার দেখলো—
এই নারী শুধু রাজনীতি করেন না, তিনি মানুষের জন্য নিজেকে মাঠে নামাতে জানেন।
১৯৮৩–১৯৯০ | সাতবার গ্রেফতার—তবু থামেননি
মোর্চা আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সংগ্রাম—
এই সাত বছরে তাকে ৭ বার গ্রেফতার করা হয়।
কারাগারের দেয়াল তাকে ভাঙতে পারেনি—
বরং রাজনীতিতে আরও অদম্য করে তোলে।
১৯৯০ | এরশাদ সরকার পতন—একটি অসম্ভবকে সম্ভব করা
অবশেষে তার নেতৃত্বে, ছাত্রদের আন্দোলন, পেশাজীবীদের সংগ্রাম, রাজনৈতিক ঐক্য—
সব মিলিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় এবং এরশাদ সরকারের পতন ঘটে।
এটাই ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থান— তার কেন্দ্রীয় মুখ ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
অধ্যায় ২ – সারসংক্ষেপ
এই অধ্যায় প্রমাণ করে— খালেদা জিয়া কোনো “accidental leader” নন।
তিনি একদম গোড়া থেকে উঠে আসা, পরীক্ষা–নিরীক্ষা পেরোনো, সংগ্রামে নিক্ষিপ্ত,একজন চূড়ান্ত ধৈর্যশীল ও আপোষহীন রাষ্ট্রনায়ক।
১৯৮২–১৯৯০
এই আট বছরই তার রাজনৈতিক চরিত্রের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং পরের প্রায় ৪ দশকের অধিক নেতৃত্বের প্রস্তুতি তৈরি করেন।
অধ্যায় ৩ | অভঙ্গুর জনসমর্থন। (১৯৯১–২০২৫)। The Unbroken Mandate। (1991–2025)। (Zero Defeat. Zero Compromise. Full Legacy Mode.)
১৯৯১—দেশ যখন স্বৈরশাসনমুক্ত, অর্থনীতি খাদের কিনারায়, মানুষ দিশেহারা। এই টার্নিং পয়েন্টে খালেদা জিয়া দাঁড়ালেন ভোটের ময়দানে— কিন্তু শুধু দাঁড়ালেন না, সরাসরি ৫টি আসনে নির্বাচন করে ৫টিতেই জয়।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এটি ছিল সেই সিগন্যাল—
“এই নারী লং টার্ম প্লেয়ার। She’s built for leadership.”
১৯৯৬ (ফেব্রুয়ারি) – পুনরায় ৫/৫ জয়
এরশাদের পরবর্তী ট্রানজিশন পিরিয়ডে ফেব্রুয়ারির সংবিধান রক্ষার নির্বাচনে —-
তিনি আবারও ৫টি আসনেই জয়লাভ করেন।
কোনো জায়গায় slip নাই, hesitation নাই— pure voter confidence.
১৯৯৬ (জুন) – সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে, বিরোধী দল
জুনে যে নির্বাচন হলো, সেখানে বিএনপি পেলো ১১৬টি আসন— এখনো এটি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসন নিয়ে বিরোধী দলে থাকার রেকর্ড।
কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্ক অন্যদিকে ঘুরে যাওয়ায় ৫টি আসনে জয় নিয়েও তাকে বসতে হলো বিরোধী দলের আসনে।
তবু তিনি মাথা উঁচু রেখে দেখালেন—
“Power isn’t the only arena; leadership is larger than office.”
২০০১ – The Return: A Landslide Mandate
২০০১ সালের নির্বাচন ছিল গেম-চেঞ্জার।
তিনি নিজে ও দল— দুটিই নিরঙ্কুশ বিজয় পেলো।
R.O.I. ছিল sky-high: স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন, সুশাসন—সব মিলিয়ে এক full-scale performance run।
২০০৭–২০০৮ | জরুরি সরকার, গ্রেফতার, ‘মাইনাস টু’ নাটক—তবুও অপরাজিতা
২০০৭ সালের ১/১১ এর পর তাকে পুনরায় গ্রেফতার করে রাজনীতি থেকে রিমুভ করার চেষ্টা হলো—
the infamous Minus Formula।
কিন্তু ইতিহাস বলে—
“You can’t minus someone who is built by the people.”
২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি নির্বাচন করলেন সর্বোচ্চ ৩টি আসনে—
এবং ৩টিতেই জয়।
তার পুরো ক্যারিয়ারে একটিও আসনে কখনও পরাজিত হননি—
এমন ট্র্যাক রেকর্ড দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় অদ্বিতীয়।
২০১৪ – একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান ও কার্যত গৃহবন্দী
২০১৪ সালে যখন একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো,
তিনি বয়কট করলেন—
কারণ ছিল নীতিগত:
Fair election or no election.
কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের নীল নকশা যেখানে আদালত আগামী ২ টি নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করা যেতে পারে মতামত দিয়েছিল।
সরকার বালুবাহী ট্রাক দিয়ে ঘিরে তাকে কার্যত গৃহবন্দী করে রাখলো। এটাই ছিল authoritarian overreach-এর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ।
২০১৬ – “দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও” আন্দোলন & Vision 2030
২০১৬ সালে তিনি রোল আউট করলেন—
দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলন— একটা moral call, একটা national awakening-এর blueprint।
তারপর তিনি ডেলিভার করলেন Vision 2030—
বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা, সামাজিক কাঠামো ও গণতন্ত্র নবায়নের জন্য একটি long-term strategic vision।
এটা ছিল essentially—
Bangladesh 2.0 Roadmap.
২০১৮ – সাজানো মামলা, ফরমায়েশি রায়, কারাবাস & ‘Midnight Election’
২০১৮ নির্বাচনের আগে তাকে একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলায় বন্দী করা হলো।
দেশ তখন সাক্ষী হলো —
যেদিন তিনি কারাগারে, সেদিনই হলো নিশিরাতের ভোট।
ব্যালটবক্স ভরল ভোটার আসার আগেই।
ফলাফল — ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রতিষ্ঠা।
২০২০ – কারাগার থেকে বাসায়, বাসায় গৃহবন্দী
২০২০ সালে অসুস্থতা ভয়াবহ আকার ধারন করলে তাকে কারাগার থেকে বাসায় নেওয়া হলেও বাসা পরিণত হয় নতুন কারাগারে।
তিনি ছিলেন effectively house arrest অবস্থায়,
যতক্ষণ না ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান সেই অবরুদ্ধতা ভেঙে দেয়।
অধ্যায় ৩ – একটি সারসংক্ষেপ
১৯৯১ থেকে ২০২৫ —
এই ৩৫ বছরে খালেদা জিয়া যা দেখিয়েছেন, সেটা এক শব্দে Indomitable।
তিনি—
৪ বার ৫টি আসনের ৫ টিতে জয়।
কখনও কোন আসনে পরাজিত নন
তিন দফা প্রধানমন্ত্রী (২ দফা পূর্ণ মেয়াদে)।
১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবিধান রক্ষার নির্বাচনে স্বল্প মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী।
১৯৮২ থেকে ২০২৫ নয় দফা গ্রেফতার
দুই দফা গৃহবন্দী
প্রায় চার দশক গণতন্ত্রের আপোষহীন মুখ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এরকম অপরাজিত নির্বাচনী রেকর্ড এবং survivor’s legacy আর কারও নেই।
অধ্যায় ৪ | Begum Khaleda Zia | পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও কর্মসংস্থান সংস্কার। Foreign Policy, Economic Turnaround & Employment Reform।
(A Strategic Playbook of Leadership)
৪/১ | প্রজ্ঞাময় পররাষ্ট্রনীতি ও বৈশ্বিক টেবিলে বাংলাদেশের ভয়েস প্রতিষ্ঠা
ভারত–বাংলাদেশ অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন দীর্ঘদিন ধরেই ছিল রাজনৈতিক deadlock-এর মতো। কিন্তু তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন—
জাতিসংঘের সামিটে সরাসরি বাংলাদেশের পক্ষে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি তোলেন। এই স্টেপটা শুধুই কূটনীতির অংশ ছিল না—এটা ছিল water security ইস্যুকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্কেল আপ করে আনার সাহসী পদক্ষেপ
১৯৯২ সালে তিনি যখন ওয়াইট হাউসে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হন, তখনই রোহিঙ্গা ইস্যু প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক diplomatic radar-এ আসে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে পরিস্থিতির ঝুঁকি বোঝান, এবং কূটনৈতিক সমাধান নিশ্চিত করেন—যা পরবর্তীতে সীমান্ত নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় critical ভূমিকা রাখে।
এক কথায়—
তিনি পররাষ্ট্রনীতিকে transactional diplomacy থেকে strategic diplomacy-তে শিফট করলেন।
এটাই তাকে আলাদা করে দেয়।
৪/২ | অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের গ্রাউন্ড–জিরো থেকে উত্তরণ
৯০-এর দশকের শুরুতে দেশ ছিল ঘূর্ণিঝড়, দুর্বল অবকাঠামো, বৈশ্বিক মন্দা, ও রাজনৈতিক অস্থিরতার চাপের ভিতর। কিন্তু তিনি পুরনো দিনের tested-path ধরে রেখে নিলেন বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত—
একটা steady-state growth model বানানো। তখনকার সেই রিকভারি ছিল ভবিষ্যতের জিডিপি গ্রোথের বীজ।
৪/৩ | নারীকর্মসংস্থান ও RMG সেক্টর—বাংলাদেশকে বৈশ্বিক এক্সপোর্ট লেনে তোলা
১৯৯১ সালে বেকারত্ব যখন অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছিল, তিনি situation-কে sugar-coat করেননি—
তিনি straight-up কাজ ধরলেন।
বার্নআউট হওয়া অর্থনীতিকে রিসেট করতে তিনি নারীদের কর্মসংস্থানে strategic shift আনলেন।
২ লক্ষ নারীকে সরাসরি RMG সেক্টরে যুক্ত করেন, যেখানে global demand বাড়ছিল এবং বাংলাদেশ ready ছিল take-off-এর জন্য।
ফলাফল?
✔ বেকারত্ব প্রায় ২৯% কমে যায়,
✔ পোশাক শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নতুন উচ্চতায় ওঠে,
✔ বাংলাদেশের নারীরা প্রথমবার শিল্প–অর্থনীতির মূলধারায় প্রবেশ করে।
এটাই সেই policy-shift যেটা পরে Bangladesh’s economic backbone হয়ে দাঁড়ায়।
৪/৪ | কাঠামোগত প্রশাসনিক সংস্কার— শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার , চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা।
“সবার জন্য শিক্ষা” ও “সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা”
প্রকল্প
১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডের জমতিয়েন সম্মেলনে সবার জন্য শিক্ষা বিশ্ব ঘোষণা আসার পরপরই বাংলাদেশে পাশ হয় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইনের। ১৯৯২ সালে ৬৮টি থানাকে এবং ১৯৯৩ সাল থেকে দেশের সকল থানাকে এই আইনের আওতাধীন আনা হয়।
এরপর ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার “সবার জন্য শিক্ষা” প্রকল্প বাস্তবায়নে একাধিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে, যার ফলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়। এই সময় সরকার প্রাথমিক শিক্ষার সম্প্রসারণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। সারা দেশে নতুন বিদ্যালয় নির্মাণ, পুরনো ভবনের সংস্কার এবং দুর্গম অঞ্চলে স্কুল স্থাপন করে শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারিত করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের বিদ্যালয়ে আনয়নের লক্ষ্যে মাসিক ভাতা চালু করা হয়, যা ঝরে পড়ার হার কমাতে সহায়ক হয়। বিশেষ করে গ্রামীণ মেয়েদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি ও টয়লেটসহ স্কুল অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমে নারীর শিক্ষা অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। পাঠ্যক্রম উন্নয়ন ও বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং শিক্ষাগত সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ঘটানো হয়।
এই সময় “প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি” (PEDP-I ও PEDP-II) বাস্তবায়ন শুরু হয়, যার মাধ্যমে সরকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সহায়তায় শিক্ষা খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এনজিও ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে “আউট অব স্কুল” শিশুদের জন্য বিকল্প শিক্ষার সুযোগ তৈরি হয়। সার্বিকভাবে বিএনপি সরকারের এই সময়ের শিক্ষানীতিমালা ও বাস্তবমুখী কর্মসূচিগুলো “সবার জন্য শিক্ষা” লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে দেয়।
এরপর ন্যূনতম শিক্ষার চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার নিয়ে সরকার ২ জুন, ২০০৩ তারিখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রূপান্তরিত করে। এই আইন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মূলত এই আইনের ফলেই প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে; যা বর্তমানে প্রায় শতভাগে পৌছেছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি একটি বড় অর্জন।
তরুণদের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল age barrier। তিনি freeze করে রাখেননি—তিনি broke the bottleneck.
সরকারি চাকরির বয়স ২৭ থেকে ৩০-এ উন্নীত করে হাজারো পরিবারের ভবিষ্যতে নতুন আলো জ্বালান।
এটা ছিল না শুধু বয়স বাড়ানো— এটা ছিল youth dividend কাজে লাগানোর জাতীয় রোডম্যাপ।
তারপর এল আরেকটি game-changing পদক্ষেপ — মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর গঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করে।
গঠনের তারিখ: ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর।
প্রাথমিক কার্যক্রম: মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম প্রথমে বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২ নং ভবনের তিনটি কক্ষে শুরু হয়েছিল।
এটি রাষ্ট্রের ইতিহাস–ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে বীরদের পুনর্বাসন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নকে নীতিগত উচ্চতায় তুলে দেয়।
এই রিফর্মগুলো একসাথে—
শ্রমবাজারকে স্থিতিশীল করলো,
প্রাথমিক ও নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হলো,
তরুণদের সুযোগ বাড়ালো,
এবং জাতির বীরদের মর্যাদা রাষ্ট্রের কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করলো।
অধ্যায় ৪-এর সারসংক্ষেপ (Executive Snapshot)
Begum Khaleda Zia-এর লিডারশিপ এই অধ্যায়ে ফুটে ওঠে তিনটি কোর ড্রাইভারে—
1 Strategic Diplomacy
2 Employment-centered Economic Reform
3 Institutional Strengthening
সব মিলিয়ে—এটা তাকে শুধু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি নয়, বরং একজন Operational Stateswoman হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
অধ্যায় ৫ | কর্মসংস্থান ও নারী শক্তির আর্থ-সামাজিক বিপ্লব। কৃষিখাতে ব্যাপক যোগান । Employment & the Women’s participation at Socio-Economic Revolution | Massive Expansion in Agriculture।
১৯৯১-এর প্রেক্ষাপট ছিল কড়া—বেকারত্ব অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল, সামাজিক স্থিতি টলছিল, আর অর্থনীতি চাহিদা-সরবরাহের টানাপোড়েনে হাঁপাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি নিলেন এক গেম-চেঞ্জিং স্টেপ—নারীশক্তিকে মূলধারায় আনার কৌশলগত সিদ্ধান্ত।
এই স্ট্র্যাটেজিক ইন্টারভেনশন দেশের শ্রমবাজারে যেন নতুন বাতাস বইয়ে দিল।
তিনি প্রায় ২৯% বেকারত্ব কমাতে সক্ষম হন, যা তৎকালীন সময়ে ছিল এক ধরনের নীতিগত মিরাকল।
এর মধ্যে ২ লক্ষ নারীকে পোশাকশিল্পে (RMG) যুক্ত করা ছিল তার সবচেয়ে স্মার্ট মুভ।
RMG খাতের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ল, বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ শক্তিশালী হলো, আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ড্রাইভারে নারীরা প্রথমবারের মতো পূর্ণমাত্রায় অংশ নিল।
এটা শুধু কর্মসংস্থান ছিল না— এটা ছিল একটা সিস্টেমিক শিফট, একটা শিল্প-অর্থনীতির রেনেসাঁ, যেখানে নারীরা দেশের গ্রোথ ইঞ্জিনে নতুন শক্তি যোগ করলো।
টেলিযোগাযোগের পথ সুগম করার মাধ্যমে অর্থনীতিতে যুক্ত করলেন নতুন মাত্রা।
বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘতম সেতু হিসাবে যমুনা সেতু তৈরীর কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে উত্তর বঙ্গের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যা অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে এনে দিয়েছিলো আমূল-পরিবর্তন।
কৃষি ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার অবদানগুলোর মধ্যে রয়েছে সার ভর্তুকি, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন, এবং ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির মতো বিভিন্ন উদ্যোগ যা কৃষকদের ক্ষমতায়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। তাঁর সময়ে কৃষি ঋণের সুদের হার কমানো, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে ট্যাক্স হলিডে দেওয়া এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভর্তুকি প্রদান।
সার ভর্তুকি: কৃষকদের জন্য সারের দাম কমাতে ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে।
গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন: গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে কৃষিকাজে আধুনিকায়ন।
কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচি: এই কর্মসূচির মাধ্যমে 🟢গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন সম্ভব হয়।
কৃষি ঋণ: কৃষি ঋণের সুদের হার কমানো হয়েছিল, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ মওকুফ করে দেওয়া হয়েছিল।
কৃষি শিল্প: কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের ট্যাক্স হলিডে প্রদান করা হয়েছিল।
রপ্তানি ভর্তুকি: কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভর্তুকি প্রদান করা হয়, যা রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
খাল খনন: তাঁর সময়ে খাল খনন করে সেচ ব্যবস্থার উন্নতি করা হয়েছে, যা সরাসরি কৃষকদের সুবিধা করে দেয়।
অধ্যায় ৬ | সংগ্রামের সমাপ্তি ও সর্বজনীন স্বীকৃতি | Conclusion of the Struggle & Universal Recognition |
১৯৭১–২০২৫ পর্যন্ত অব্যাহত সংগ্রাম ও ত্যাগের ফলে জনগণ তাকে গণতন্ত্রের আপোষহীন মাতা ও সর্বজনীন নেত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছে।
যার ফলস্বরূপ ২১’শে নভেম্বর ২০২৪ ও ২০২৫ সনের “আর্মড ফোর্সেস ডে”-তে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল শিথিল করে বিশেষ অতিথির মর্যাদায় ততকালীন রাষ্ট্রপক্ষ ইন্টেরিয়াম গভর্নমেন্ট গণতন্ত্রের আপোষহীন মাতাকে উপস্থিত রাখেন।
এছাড়া ১’লা ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে উনি জীবন মৃত্যেুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে বেডে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ উনাকে ভিভিআইপি ঘোষনা করে উনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেন —- যাহা সম্পূর্ণরুপে উনাকে সম্মান প্রদশর্নের নিমিত্তে করা হয়েছে।
বেগম জিয়া ২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় একটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মামলায় ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে ১৭৮৮ সালে ১৭ একর জায়গার উপর নির্মিত কারাগার যাহা ১০ এপ্রিল ২০১৬ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয় সেই ২ বছর আগে পরিত্যক্ত কারাগারে উনার স্থান হয় কারাবাসের জন্য। উদ্দেশ্য প্রণোদিত রায়ের মাধ্যমে কারা নির্বাসনের পর থেকে ধীরে ধীরে অসুস্থতা ও শারীরিক নানান জটিলতা দেখা দিতে থাকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর। ততকালীন রেজিম ওনার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি শোনা যায় সে সময় আপোষহীন নেত্রীর পক্ষে ওনার স্বজনরা উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্জি জানালে ততকালীন রেজিম স্পষ্ট জানিয়ে দেন রাষ্ট্রপতির কাছে সাধারণ ক্ষমা চাইতে তাহলে শর্তসাপেক্ষে উন্নত চিকিৎসার জন্য উনাকে ছাড়পত্র দিতে পারেন কিন্তু অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার করতে অপারগতা প্রকাশ করলেন এবং তিনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দৃঢ়তার সাথে আবারও একবার দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আপোষহীন হয়ে এভারেস্ট শৃঙ্গের ন্যায় অটুট আত্মবিশ্বাস নিয়েই নিশ্চিত মৃত্যুর পথ জেনেও অসুস্থতাকে আলিঙ্গন করে চললেন।
৬ই আগষ্ট ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গৃহবন্দী দশা থেকে উত্তরন ঘটে। পরবর্তীতে ৭ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার এম্বুলেন্সে করে লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার জন্য যান এবং ১১৭ দিন পর ৬ মে ২০২২ তারিখে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
গত ২৩ নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে ফুসফুসের সংক্রমন সহ শারিরীক নানান জটিলতা নিয়ে গুরুতর অসুস্থ হলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি হোন এবং ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থায় অবনতি ঘটতে থাকে এমতাবস্থায় উনার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় ও নিবন্ধন থাকা সকল গুরুত্বপূর্ণ দল, ইসলামিক পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ (আলেম-ওলামা), সনাতন ধর্মাবলম্বী ও আদিবাসী, সকল শ্রেণী পেশার সাধারণ মানুষ, রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত সমস্ত ব্যক্তিবর্গ, সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কৃষক,শ্রমিক,খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ মজদুর ইত্যাদি সহ আপামর বাংলাদেশি জনগণ। যে যার অবস্থান থেকে বিভিন্ন ধর্ম উপাসনালয়ে দোয়া/প্রার্থনা পাঠ শুরু করে প্রান্তিক শ্রেণীর জনগণ সৃষ্টিকর্তার নিকট হাত তুলে প্রার্থনা করছেন। আমার জীবনে দেখা সেরা মূহুর্তগুলোর মধ্যে এই টাইম ফ্রেম চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে কারন আমাদের দেশের জনগণ এমনরূপে দ্বিদ্ধা বিভক্ত যে ১৯৭১ সালের মু্ক্তিযুদ্ধ ব্যতিত দেশের স্বার্থে দেশপ্রেমকে পু্ঁজি করেও তারা কখনো ঐক্য গড়ে তুলতে পারেনি।
অথচ একটি অসুস্থতা! যার ত্যাগের ইতিহাস অমলিন হরফে লেখা স্বামী,সন্তান,মা,স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি হারানো ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে দীর্ঘ সংগ্রামের পথকে বেছে নিয়ে এতো অপমান এতো কষ্ট সহ্য করে দেশের মানুষকে গভীর মমতায় আগলে নিয়ে বলেছিলেন—
“দেশের বাইরে আমি কোথায় যাবো? দেশের বাইরে আমার কোন ঠিকানা নাই! এই দেশ আমার এই মাটি আমার এই মানুষ আমার। আমার এই স্বজনহারা জীবনে আপনারাই (বাংলাদেশের জনগণ) আমার স্বজন।”
যার প্রতিদান সৃষ্টিকর্তা ও জনগণ তাকে ফেরত দিয়েছেন।
তার জীবন প্রমাণ করে — অপরাজিতা, আপোষহীন, এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ রাষ্ট্রনায়ক।
উপসংহার | এক বাক্যে সর্বজনীন স্বীকৃতি | Universal Recognition |
“অতীতের সংগ্রাম, সহ্য ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে, বেগম খালেদা জিয়া আজ গণতন্ত্রের আপোষহীন মাতা এবং জনগণের সর্বজনীন সমাদৃত — প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃত।”
লেখক – শোয়েব হাসান
